ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলার ভামদা আলিম মাদরাসার ২ জন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ১৭ লাখ টাকার বিনিময়ে মেহরাব হোসেন ও রুমি বেগম নামে দুজন প্রার্থীকে নিয়োগ দেবেন বলে মাদরাসার অধ্যক্ষ ও গভার্ণিং বডির লোকজন চূড়ান্ত করে অন্য প্রার্থীদের নিকট ঘোষণা করেছে।
এমন অভিযোগে ক্ষুদ্ধ হয়ে এলাকাবাসী ও ৬ জন চাকুরী প্রার্থী নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধসহ স্বচ্ছ নিয়োগে সহযোগিতা চেয়ে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে গত রবিবার (৩১ অক্টোবর) লিখিত অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগ ও সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গেল জুলাই মাসের ১৫ তারিখে স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে ভামদা আলিম মাদরাসার অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে ২ জন ও ভাইস প্রিন্সিপাল পদে ১ জন লোকবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তিনটি পদের বিপরীতে ২৭ জন প্রার্থীর আবেদন জমা হয়। এর মধ্যে অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে ২ জনের বিপরীতে ১৯ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। আবেদন পত্র যাচাই বাছাই করে ৩টি পদে ২৬ জন প্রার্থীকে আগামী শুক্রবার (০৫ নভেম্বর) মাদরাসা অফিস কক্ষে নির্বাচনী পরীক্ষায় উপস্থিত থাকার জন্য কয়েকজন প্রার্থীকে প্রবেশপত্র প্রদান করা হয়েছে।
পীরগঞ্জ উপজেলার আকাশীল গ্রামের শহিরুল ইসলামের ছেলে দেলোয়ার হোসেন অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেট পদে নির্বাচনী পরীক্ষার অংশগ্রহণের জন্য প্রবেশপত্র পেয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, মাদরাসার অধ্যক্ষ শাহ আলম সিদ্দিকী ও কমিটির লোকজন ১৭ লাখ টাকার বিনিময়ে পীরগঞ্জ উপজেলার আকাশীল গ্রামের মেহরাব হোসেন ও রুমি বেগমকে নিয়োগ দেবেন মর্মে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন। এ বিষয়টি এলাকাবাসী ও অন্যান্য প্রার্থীরা সকলেই জানে। আমরা স্বচ্ছ ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য জেলা প্রশাসক ও মন্ত্রণালয়ে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেছি।
আবু বক্কর সিদ্দিক নামে অন্য এক প্রার্থী জানান, টাকার বিনিময়ে নিয়োগের কারণে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমরা মেধাবীরা স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরি পাচ্ছি না। অযোগ্য প্রার্থীরা টাকা দিয়ে নিয়োগ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যহত করছে। আমরা এসব বন্ধের দাবিসহ স্বচ্ছভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়ার লক্ষে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
পীরগঞ্জ উপজেলার কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান আসিক বলেন, ভামদা আলিম মাদ্রাসায় কর্মচারী নিয়োগ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে হচ্ছে। এই বিষয়টি আমাদের গ্রামসহ এলাকায় এখন ওপেন সিক্রেট। নিয়োগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হোক সেটাই প্রত্যাশা করছি।
মঙ্গলবার সরেজমিন গিয়ে ভামদা আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শাহ আলম সিদ্দিকীকে পাওয়া যায়নি। তাঁর অনুপিস্থিতিতে দায়িত্বে থাকা প্রভাষক এবিএম আহসান হাবীব জানান, প্রার্থীদের প্রদান করা বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগের প্রেক্ষিতে আগামী শুক্রবার নিয়োগের নির্বাচনী পরীক্ষা স্থগিত হতে পারে। মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারিত ডিজি প্রতিনিধি মুঠোফোনে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন। অধ্যক্ষ সেই কাজে ঠাকুরগাঁও গেছে। পরীক্ষা স্থগিত হলে প্রার্থীদের মোবাইলে জানিয়ে দেওয়া হবে।
মুঠোফোনে ভামদা আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শাহ আলম সিদ্দিকী জানান, কর্মচারী নিয়োগে লেনদেনের সব অভিযোগ মিথ্যা। কারো কাছে টাকা নেওয়া হয়নি। যারা অভিযোগ করছেন তারা মাদরাসার সুনাম নষ্ট করতেই এসব করছেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, নিয়োগে অনিয়ম বিষয়ে খোজখবর নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।